চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে একটি কার্গো জাহাজ থেকে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনির পাচারের চেষ্টা প্রাক্কালে, এক পেশাদার চোর চক্র ধরা পড়ে। এই ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে নৌ-পুলিশ, এবং মামলাসহ সময়ের সাথে তদন্ত-অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, পাচারের পেছনে রয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা মূল্যমানের চিনি। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে নৌপথে চলাচলরত মালবাহী জাহাজে বিভিন্ন কৌশলে মূল্যবান পণ্য চুরি করে আসছে। তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাহাজের অসাধু স্টাফদের সঙ্গে যোগসাজশে চুরির ঘটনা ঘটাত।
দ্রুত তথ্য–সারণি
বিষয় | তথ্য |
---|---|
ঘটনা | জাহাজে ১৩ কোটি টাকার চিনি চুরির পরিকল্পনা |
জাহাজের নাম | এমভি সী ওয়েস্টিন-১ (রেজি. নং-৩০১৫৪) |
স্থান | চাঁদপুরের মেঘনা নদী |
তারিখ/সময় | পরিকল্পনা: ৪–৫ আগস্ট ২০২৫ |
গ্রেফতারকৃত সংখ্যা | ৮ জন |
গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় | মেহেদী হাসান মুন্না, তরিকুল, নুরুজ্জামাল, মানিক হাওলাদার, শরিফ মির্জা, মজিবুর রহমান সর্দার, বাচ্চু বেপারী এবং মাস্টার আইয়ুব মৃধা |
কৌশল | ভুয়া পরিচয়ে জাহাজে প্রবেশ → স্টাফদের সঙ্গে যোগসাজশ → খাবারে নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো → অচেতন করার চেষ্টা |
পণ্য | প্রায় ১৩ কোটি টাকার চিনি |
তদন্তে উদঘাটন | চক্রটি পেশাদার ও সংঘবদ্ধ, দীর্ঘদিন ধরে নৌপথে মালামাল চুরি করে আসছে |
বর্তমান অবস্থা | গ্রেফতারকৃতরা আদালতে প্রেরিত |
চুরির কৌশল
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে নৌপথে চলাচলরত মালবাহী জাহাজে বিভিন্ন কৌশলে পণ্য চুরি করে আসছে। তারা প্রাথমিকভাবে জাহাজের অসাধু স্টাফদের সঙ্গে যোগসাজশে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
মামলার বাদী প্রতিষ্ঠানের এমভি সী ওয়েস্টিন-১ (রেজি. নং-৩০১৫৪) নামক জাহাজে কুমিল্লার মেঘনা থানায় পণ্য পৌঁছানোর কথা ছিল। চক্রটি আগে থেকেই জাহাজমাস্টার আইয়ুব মৃধার মাধ্যমে এ তথ্য জেনে নেয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক, আসামি মেহেদী হাসান মুন্না প্রকাশ আকাশ জাহাজের মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সহযোগীদের জাহাজে তোলে। আসামি তরিকুল ও নুরুজ্জামাল মোনায়েম সুগার মিলের স্কট পার্টির সদস্য পরিচয়ে ৪ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১১টার দিকে পতেঙ্গার চায়নাঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজে ওঠে।
জাহাজে উঠে তারা মাস্টার আইয়ুব মৃধা ও গ্রিজার ইমরান শেখকে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানায়। এরপর ৫ আগস্ট ২০২৫ বিকেলে জাহাজের বাবুর্চিকে কৌশলে রান্নাঘর থেকে বাইরে পাঠিয়ে নুরুজ্জামাল কিচেনে প্রবেশ করে এবং সাদা গুঁড়া জাতীয় নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে খাবারে মিশিয়ে স্টাফদের অচেতন করার চেষ্টা চালায়। বাইরে পাহারা দিচ্ছিল তরিকুল।
ঘটনা-প্রবাহ (টাইমলাইন)
তারিখ | সময়/সময়কাল | ঘটনা |
---|---|---|
৩ আগস্ট ২০২৫ | সকাল | এম.ভি সি ওয়েস্টিন-১ (রেজিস্ট্রেশন নং-৩০১৫৪) নামক জাহাজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে অপরিশোধিত ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আব্দুল মোমেন চিনি কলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে । (Bangla news, kalerkantho.com) |
৪ আগস্ট ২০২৫ | দিন | চাঁদপুর পৌঁছানোর পর গন্তব্যে না গিয়ে জাহাজটি মেঘনায় অবস্থান নেয়। (Bangla news, kalerkantho.com) |
৫ আগস্ট ২০২৫ | বিকেল | মাস্টার আইয়ুব মৃধা ও সহযোগীরা খাবারে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে কর্মীদের অচেতন করার চেষ্টা চালান, এরপর চিনির কিছু অংশ চুরি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। (Bangla news) |
৮ আগস্ট ২০২৫ | এই ঘটনার পর ঐ জাহাজের এক কর্মকর্তা সনু কুমার ত্রিপুরা বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। (Dhaka Post) | |
১৫–১৬ আগস্ট ২০২৫ | ঘটনা সম্পর্কে মালিক পক্ষ এবং সংশ্লিষ্টরা অবগত হন, তদন্ত ও অনুসন্ধান ত্বরান্বিত হয়। (Bangla news, kalerkantho.com) | |
১৬ আগস্ট ২০২৫ | সন্ধ্যা | হরিনাঘাট এলাকা থেকে নৌ-পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করে, এবং আটক দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। (Bangla news, kalerkantho.com) |
এরপরের পর্যায়ে | চারজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন; একজনকে রিমান্ডে, বাকীদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার দায়ের চাঁদপুর সদর মডেল থানা কর্তৃক করা হয়। (Bangla news) |
গ্রেফতারকৃত আসামির তালিকা
- মেহেদী হাসান মুন্না ওরফে আকাশ (২৭), পিতা মোশারফ হোসেন, সাং-উত্তর মালগাজী, চাঁদপুর
- মোঃ তরিকুল (২৭), পিতা হানিফ হাওলাদার, সাং-জয় বাংলা সড়ক, চাঁদপুর
- নুরুজ্জামাল (৩২), পিতা আব্দুল মান্নান, সাং-মোর্শেদ সড়ক, চাঁদপুর
- মোঃ মানিক হাওলাদার (২৭), পিতা ফারুক হাওলাদার, সাং-মালগাজী ক্লাব, বাগেরহাট
- মোঃ শরিফ মির্জা (৪৩), পিতা কাদের মির্জা, সাং-রেলওয়ে কাঁচাকোলনী, উত্তর শ্রীরামদী, চাঁদপুর
- মোঃ মজিবুর রহমান সর্দার (৬৪), পিতা মৃত নুরুল হক সর্দার, সাং-উত্তর শ্রীরামদী, রেলওয়ে ক্লাব, চাঁদপুর
- বাচ্চু বেপারী (৫৭), পিতা আলাউদ্দিন বেপারী, সাং-যমুনা রোড, চাঁদপুর
- (আগে গ্রেফতার হওয়া) এমভি সী ওয়েস্টিন-১ এর মাস্টার আইয়ুব মৃধা।
তদন্ত ও আইনি পরিস্থিতি
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার চোর। তারা পরিকল্পনা করে জাহাজে চড়ত, অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতা নিত এবং সুযোগমতো মূল্যবান মালামাল চুরি করে বাজারে বিক্রি করত।
পুলিশের ভাষ্যে, চক্রটির লক্ষ্য ছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকার চিনি চুরি করা। তবে অভিযানের মাধ্যমে পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং সংশ্লিষ্টরা গ্রেফতার হয়।
- মামলা দাখিল: চিনি মালিক পক্ষ চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন, অভিযোগ হয়েছে কার্গো জাহাজ থেকে অবৈধভাবে চিনি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। (Bangla news)
- আইনী ব্যবস্থা: চারজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ১৬৪ ধারায়, একজন রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের (মোট সাতজন) জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। (Bangla news)
চাঁদপুরে সংঘটিত এই চোরাচালান চেষ্টায় একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সংগঠিত চোর চক্র জড়িত ছিল। ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা সময়সীমায় চিনির একটি বিপুল অংশ নদীতেই আটকে পড়ে এবং চুরির পরিকল্পনা কার্যকর করার আগে নৌ-পুলিশ ও মালিক পক্ষ তৎপর হবার কারণে ঘটনা ধরা পড়ে। বর্তমানে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।