রামগঞ্জে বিষাক্ত সাপের কামড়ে ৫ বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু: অ্যান্টিভেনমের অভাবে হাসপাতালে কর্তব্যে অবহেলা অভিযোগ

সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু। মাদ্রাসা ছাত্র মোঃ আবদুল আলিম, বয়স ৫ । চাঁদপুর, রামগঞ্জ।

রামগঞ্জ পৌর এলাকার কলচমা চৌকিদার বাড়ীতে মঙ্গলবার দুপুরে মাদ্রাসা পড়ুয়া মোঃ আবদুল আলিম (৫) নামের এক শিশুর বিষাক্ত সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম না পাওয়া ও চিকিৎসকের অবহেলার কারণে শিশুটির প্রাণহানি ঘটে।

ঘটনার বিবরণ

শিশুটির মা মহিমা আক্তার জানান, আবদুল আলিম দুপুর ১২টায় ঘরের দরজায় বসে খেলছিল। হঠাৎ সে চিৎকার দিলে পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে দেখতে পান একটি সাপ তার উপর আক্রমণ করেছে এবং সাপটি পরে ঘরের পাশে থাকা একটি গর্তে চলে যায়। দ্রুত শিশুটিকে নিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর) নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফারজানা ইতি জানান, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম নেই। শিশুটিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

শিশুটির মামা মোঃ রাছেল শেখ অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালে থাকা অ্যান্টিভেনম বিক্রি করে দেওয়ার কারণে আজ তার ভাগিনার প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি জানান।

চিকিৎসকের বক্তব্য ও হাসপাতালের অবস্থান

ডাক্তার ফারজানা ইতি জানান, শিশুটির মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিশ্চিত হওয়া যায়নি এটি সাপের কামড় কিনা। ব্লাড টেস্টে নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তারা অন্যত্র চিকিৎসার কথা বলায় শিশুটিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রেফার করেন।

অপরদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, রামগঞ্জ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে এবং রোগী রেফার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যান্টিভেনম দেওয়া উচিত। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।

বিষয়তথ্য
ঘটনারামগঞ্জে বিষাক্ত সাপের কামড়ে ৫ বছর বয়সী মোঃ আবদুল আলিমের মৃত্যু
সময় ও স্থান১২ আগস্ট ২০২৫, রামগঞ্জ পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ড কলচমা চৌকিদার বাড়ী
আহত ব্যক্তিমোঃ আবদুল আলিম, বয়স ৫ বছর, মাদ্রাসা পড়ুয়া
প্রথম চিকিৎসারামগঞ্জ ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল, কিন্তু অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়নি
চিকিৎসকের বক্তব্যব্লাড টেস্টে সাপের কামড় নিশ্চিত না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আশঙ্কায় অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ হয়নি
হাসপাতালের অবস্থানউপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে, তদন্ত চলছে
অভিযোগঅ্যান্টিভেনম বিক্রি ও চিকিৎসকের অবহেলা, প্রাণহানি ঘটেছে
শিশু মৃত্যুর সময়হাসপাতাল থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করার পথে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষডাক্তার ফারজানা ইতি (রামগঞ্জ হাসপাতাল), ডা. আনোয়ার হোসেন (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা)
জনস্বাস্থ্য বিষয়অ্যান্টিভেনমের অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসকের দায়িত্ব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও ত্রুটি

এন্টিভেনম না থাকা এবং আমাদের জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বিষাক্ত সাপের কামড় এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা। সাপের বিষ জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি, তবে সঠিক সময়ে প্রয়োগকৃত অ্যান্টিভেনম জীবন বাঁচাতে পারে। অথচ রামগঞ্জের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের অভাব কিংবা অপ্রতুলতা, চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা মিলে প্রাণহানির কারণ হয়েছে।

সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো ও ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ বারবার পাওয়া যায়। অ্যান্টিভেনমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ অন্যত্র বিক্রি করা, রোগীদের সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর একটি দারুণ ছায়া ফেলে।

চিকিৎসকের দায় হলো রোগীর জীবন রক্ষা করা, যেকোনো শঙ্কার মধ্যে দিয়েও যতটুকু সম্ভব দ্রুত ও নিরাপদ চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকলেও আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। রোগীর জীবন বাঁচানোই সর্বোচ্চ কর্তব্য হওয়া উচিত।

সরকারি হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করা, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, রোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যখাতের স্বচ্ছতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

তবে শুধুমাত্র চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা নয়, স্বাস্থ্যসেবায় দুর্নীতি রোধ ও সুষ্ঠু মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে প্রশাসনের জোরদার পদক্ষেপ অপরিহার্য।

শিশু আবদুল আলিমের মৃত্যু আমাদের সকলের জন্য একটি কড়া বার্তা — জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে না পারলে জীবনহানির ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *